চন্দ্রবিন্দুর নিজস্ব কোনো ক্ষমতা বা শক্তি নেই- এই বর্ণটি পরাশ্রয়ী ও অবহেলিত মনে হলেও বাংলাভাষায় এর অনেক প্রভাব ও সম্মান- এতো সম্মান যে অন্য বর্ণমালাগুলো এর ধারে কাছেও আসতে পারে না। বাংলাভাষায় সম্মানসূচক সর্বনাম পদে চন্দ্রবিন্দুর ব্যবহার হয়ে আসছে সেই আবহমান কাল থেকে। যেমন- তাঁরা, যাঁরা, তাঁদের, যাঁদের, তাঁকে, যাঁকে- অর্থাৎ বাংলাভাষায় খুব সম্মানিত কারো ক্ষেত্রেই চন্দ্রবিন্দুর ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও স্বর্গীয় অথবা মৃত হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তির নামের আগে এই চন্দ্রবিন্দু চিহ্ন বসে । যেমন- ৺রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অর্থাৎ স্বর্গীয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। চন্দ্রবিন্দু যে বর্ণের উপর বসে, সেই বর্ণের উচ্চারণ আনুনাসিক হয়। কেবল স্বরবর্ণ ও স্বরান্ত ব্যঞ্জনের সঙ্গে এটি যুক্ত হতে পারে।চন্দ্রবিন্দু ব্যবহারের আরো কিছু নিয়ম: মূল শব্দের নাসিক্য ধ্বনি ঙ, ঞ, ণ, ন লুপ্ত হলে বাংলা শব্দে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহৃত হয়- অঞ্চল > আঁচল, পঙ্ক > পাঁক, বৃন্ত > বোঁটা, ক্রন্দন > কাঁদান। সম্মানসূচক সর্বনাম পদে চন্দ্রবিন্দুর ব্যবহার হয়- তাঁরা, যাঁরা, তাঁদের, যাঁদের, তাঁকে, যাঁকে। সংখ্যাবাচক শব্দে চন্দ্রবিন্দুর ব্যবহার হয়- পাঁচ, পঁচিশ, পঁচাশি। দ্বিরাবৃত্ত শব্দে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহৃত হয়- আঁকাআঁকি, খোঁচাখুঁচি। ক্রিয়াবাচক শব্দে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহৃত - কাঁদা, রাঁধা। এছাড়াও যে কোন তদ্ভব শব্দের বানানে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহ্নত হয় যেমনঃ চন্দ্র> চাঁদ।এটি অন্য কোনো স্বর বা ব্যঞ্জনবর্ণের উপর বসে এর উচ্চারণে কিছুটা নাসিক্য ভাব নিয়ে আসে। তদ্ভব শব্দে চন্দ্রবিন্দুর ব্যবহৃত হয়- গাঁ > গ্রাম, চাঁদ> চন্দ্র। চন্দ্রবিন্দু ঠিক বর্ণ নয়, একে বরং বলা চলে চিহ্ন।