ট্রি ম্যান রোগের কারন ও চিকিতসা:
সর্বপ্রথম ২০০৭ সালে ইন্দোনেশিয়াতে এক জেলের দেহে এটি ধরা পড়ে। একে ট্রি-ম্যান রোগ নামে ডাকা হলেও এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘এপিডারমোডিসপ্লাসিয়া ভেরুসিফরমিস’। এছাড়া রোগটিকে ‘লেওয়ানডোস্কি-লুজ ডিসপ্লাসিয়া’ নামেও আখ্যায়িত করা হয়। জার্মান চর্মরোগবিশেষজ্ঞ ফেলিক্স লেওয়ানডোস্কি ও উইলহেলম লুজের কাছে প্রথম এই রোগটি ধরা পড়ে বলে একে ওই নামে আখ্যায়িত করা হয়। ‘হিউম্যান প্যাপিলোমা’ নামের এক ধরনের ভাইরাসের (এইচপিভি) আক্রমণে মানবদেহে এ রোগটি সৃষ্টি হয়।<br>এ রোগের উপসর্গ: এটি হলে ত্বকে ক্যান্সার হওয়ার বড় ধরনের ঝুঁকি থাকে। রোগটিতে হাত এবং পায়ে প্রথমে এক ধরনের ফুস্কুরি তৈরি হয়। মানবদেহে এইচপিভি টাইপ-৫ ও টাইপ-৮ বেড়ে গেলে এ রোগ আক্রমণ করে। সাধারণত ২০ বছর বয়সের মধ্যে এটি মানবদেহে আক্রমণ করে। তবে কখনো কখনো মধ্য বয়সীরাও রোগটিতে আক্রান্ত হতে পারে। দেহের ক্রোমোজোমের মধ্যে ‘এভার-১’ অথবা ‘এভার-২’ জিনের কার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়লে রোগটি সৃষ্টি হয়। বংশগত কারণেই মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয় বলে চিকিৎসকদের ধারণা।<br>ট্রি-ম্যান রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর মুখমণ্ডল, ঘাড়, দেহ এবং গোপন অঙ্গে আঁশযুক্ত লালচে বাদামি রঙের চেপ্টা এক ধরনের ফুস্কুরি দেখা দেয়। ধীরে ধীরে দেহে এগুলো বাড়তে থাকে এবং সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। অল্প কয়েকটি ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এগুলো এক জায়গায়ই সীমাবদ্ধ থেকেছে এবং কম তীব্র হয়েছে।<br>হিউম্যান পাপিলোমা ভাইরাস এমন এক গ্রুপের ভাইরাস যা ত্বক ও শরীরের আর্দ্র ঝিল্লিকে আক্রান্ত করে। এমন শতাধিক রকমের ভাইরাস আছে। এর মধ্যে ৩০ রকম ভাইরাস মানুষের জননেন্দ্রীয়কে আক্রান্ত করতে পারে। এ ভাইরাসের সব রকমের সংক্রমণেই ত্বকে আঁচিল সৃষ্টি করে। এ সংক্রমণ খুব দ্রুত গতিতে ত্বকের বাইরের স্তরে ছড়িয়ে পড়ে। বেশির ভাগ আঁচিল ফুলকপির মতো ছড়িয়ে পড়ে। তা ত্বকের ওপরে অল্প জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এমন আঁচিল সাধারণত দেখা যায় বাহুতে, মুখে ও কপালে।<br>চিকিৎসা পদ্ধতি: এখন পর্যন্ত রোগের তেমন কার্যকর কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি বের হয়নি। ‘ভিটামিন এ’ অ্যাসিট্রেটিন জাতীয় ওষুধ প্রতিদিন ০.৫ মিলিগ্রাম থেকে ১ মিলিগ্রাম সেবন করলে তা এ রোগ প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে। এর সাথে প্রোটিন সমৃদ্ধ ‘ইন্টারফেরনস’ জাতীয় ওষুধ সেবনও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।<br>এছাড়া চিকিৎসকদের মতে, হিস্টামিন জাতীয় ‘সিমেটিডিন’ ওষুধও রোগটি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তবে কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, সিমেটিডিন এ ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। বরং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ ‘ক্যালসিপোট্রিয়ল’ জাতীয় ওষুধ এতে সবেচেয়ে বেশি কার্যকর হতে পারে।<br>২০০৮ সালে রোমানিয়োতে ইয়ন টোডার এ রোগে আক্রান্ত হয়। ২০১৩ সাল পর্যন্ত চিকিৎসায় সে অনেকটাই সুস্থ হয়ে ওঠে। এরপর তার দেহে এ রোগ খুব সামান্য দেখা গিয়েছে। তবে রোগটি নিয়ে গবেষণা আর বেশি দূর এগোয়নি। কিন্তু ২০০৭ সালে ইন্দোনেশিয়াতে আক্রান্ত দেদে কোসওয়ারাকে সুস্থ করা সম্ভব হয়নি। কারণ তার সম্পূর্ণ চিকিৎসার আগেই তিনি মারা গিয়েছিল। ২০০৮ সালে তার দেহ থেকে ৬ কিলোগ্রাম আঁচিল অপারেশন করে আলাদা করা হয়। তখন তাকে নিয়ে ডিসকভারি চ্যানেল একটি প্রতিবেদন প্রচার করে। সম্প্রতি বাংলাদেশে বিরল ট্রি-ম্যান রোগে আক্রান্ত আবুল হোসেনের অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে।