...
ই-নলেজ অতিক্রম করলো লক্ষাধিক সদস্যের এক বিশাল মাইলফলক!বিস্তারিত...

সদস্যঃ আবু উবাইদাহ

আমি সদস্য হয়েছি 1 মাস (since 17 মার্চ)
সদস্যের ধরণ নিবন্ধিত সদস্য
আমার পূর্ণ নাম: আবু উবাইদাহ আল-হিন্দী
লিঙ্গ: male
পেশা:
আমার বর্তমান অবস্থান:
প্রিয় উক্তি:

আবু উবাইদাহ এর কার্যক্রম

স্কোরঃ 6 পয়েন্ট(র‌্যাংক # 398 )
উপাধিঃ (অতিথি)
প্রশ্নঃ 1
উত্তরঃ 0
মন্তব্যসমূহঃ 0
ভোট দিয়েছেনঃ 0 টি উত্তর
দান করেছেন: 0 সম্মত ভোট, 0 অসম্মত ভোট
প্রাপ্তঃ 0 সম্মত ভোট, 0 অসম্মত ভোট

আবু উবাইদাহ এর সময়ক্রম

প্রিয় অথিতি, এই সময়ক্রমে পোস্ট করতে চাইলে দয়া করে প্রবেশ করুন কিংবা নিবন্ধন করুন
আসন্ন আমেরিকার ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প নির্বাচিত হলে মুসলিমদের লাভ-ক্ষতির সম্ভাবনা প্রসঙ্গে

بِسْمِ اللهِ والصلاة والسلام على رسول الله، وعلى آله وأصحابه ومن والاه

.

আজকের আলোচ্য বিষয়ের শিরোনাম হচ্ছেঃ আমেরিকার ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হলে মুসলিমদের লাভ-ক্ষতির সম্ভাবনা প্রসঙ্গে।

.

আমরা ইতিমধ্যেই অবগত আছি যে, আমেরিকায় ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসের ০৫ তারিখে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য, বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুনরায় নির্বাচনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রিপাবলিকান পার্টির সদস্য ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় বারের জন্য প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

.

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এ পর্যন্ত সকল জনমত জরিপে ডোনাল্ড ট্রাম্প বাইডেনের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। আজকের আলোচনাটা মূলত এজন্যই করা। কারণ, জনমত জরিপে ট্রাম্পের এগিয়ে থাকার বিষয়টি নিয়ে অনেকেই অনেক ধরনের মন্তব্য ও মতামত ব্যক্ত করেছে। অনেকে বলতে চাচ্ছে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে মুসলিমদের জন্য ভালো হবে। কারণ, ট্রাম্পের কারণে আমেরিকার আন্তর্জাতিক ক্ষমতার প্রভাব অনেক কমে যাবে, এতে মুসলিম বিশ্বে আমেরিকার হস্তক্ষেপ কমে যাওয়ায় মুসলিমদের অনেক উপকার হবে। আবার অনেকেই বলতে চাচ্ছে, ট্রাম্প বিজয়ী হলে মুসলিমদের জন্য, বিশেষ করে আমেরিকান মুসলিমদের অবস্থা আরো খারাপ হবে, যে সকল মুসলিমরা ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়া ভালো মনে করছেন তারা আসলে মুসলিমদের ভালো চাচ্ছে না, উম্মাহর প্রতি তাদের কোন দরদ নেই, ট্রাম্পের কারণে মুসলিমরা অনেক চাপে পড়বে এতে তারা খুশি হচ্ছে ইত্যাদি কথা শোনা যাচ্ছে।

.

তো বাস্তবে ব্যাপারটি আসলে কি?? এই বিষয়টা ক্লিয়ার করার চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ। ওয়ামা তাওফীকী ইল্লা বিল্লাহ।

.

এতে কোন সন্দেহ নেই যে, বর্তমানে আমেরিকার গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্প। এটা শুধু আমাদের কথা নয় বরং এটা বেশিরভাগ পশ্চিমা বিশ্লেষকদেরও ধারণা যে, ট্রাম্প হচ্ছে আমেরিকার গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। কেননা পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্রকে দীর্ঘ সময় স্থিতিশীলভাবে টিকে থাকতে হলে তাকে একটি আদর্শের উপর থাকতে হয়। আদর্শ ছাড়া কোন জাতি কখনো দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে পারে না। আদর্শ ছাড়া হয়ত ৪০/৫০ বছর বা তারও কিছু বেশি সময় রাষ্ট্র টিকে থাকবে, কিন্তু একটি সময় রাষ্ট্রের পতন অবশ্যই হবে। যে বিষয়ে ইবনে খালদুন রহমাতুল্লাহি আলাইহির সাম্রাজ্যের জীবনকাল সংক্রান্ত থিওরি থেকেও ধারণা পাওয়া যায়। রাষ্ট্র যদি তার জাতিকে একটি আদর্শের উপর একীভূত না করে, তাহলে ঐ রাষ্ট্র দীর্ঘ কয়েকশ বৎসর টিকে থাকতে পারবে না।

.

আমেরিকা এখন পর্যন্ত যে আদর্শের উপর টিকে আছে ট্রাম্প মূলত সেই আদর্শে বিশ্বাস করে না। শুধু বিশ্বাস করে না ব্যাপারটা তা নয় বরং ট্রাম্প আমেরিকার বর্তমান আদর্শের ঘোর বিরোধী এবং গত মেয়াদে ট্রাম্প আমেরিকার আদর্শের বাহিরে গিয়ে অনেক কাজও করেছে।

.

আমেরিকার যে ফরেন পলিসি বা পররাষ্ট্র নীতি (BLOB) আছে, এর মাধ্যমেই আমেরিকা তার ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বৈশ্বিকভাবে টিকিয়ে রেখেছে। ট্রাম্প এই ফরেন পলিসির সাথে একমত না। শুধু ট্রাম্পই যে একমত হতে পারিনি তা নয়, এর আগে বারাক ওবামাও পুরোপুরি একমত ছিল না। কিন্তু বারাক ওবামা রাজনীতিবিদ হওয়ায় অনেক চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেই ফরেন পলিসি নিয়ে এত বিরোধিতা করেনি। কিন্তু ট্রাম্প রাজনীতিবিদ নয় বরং ব্যবসায়ী। যেটা ভালো মনে করে সেটাই হুটহাট সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। এটাই আমেরিকার জন্য বড় সমস্যা।

.

এখানে দুইটি প্রেক্ষাপট সামনে আসেঃ

.

প্রথম প্রেক্ষাপটঃ

.

একটি দেশ আভ্যন্তরীণভাবে টিকে থাকে তার প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে। দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যত স্বাধীন ও শক্তিশালী হয়, ঐ দেশ তত স্থিতিশীল থাকে ও টিকে থাকে। প্রতিষ্ঠান বলতে দেশের আইন ও বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, দূর্নীতি দমন কমিশন, গোয়েন্দা সংস্থা, সেনাবাহিনী, মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী মহল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জনগণ, দেশের ক্ষমতাসীন সরকারকে, গণতান্ত্রিক দেশ হলে নির্বাচন কমিশন ইত্যাদিকে প্রতিষ্ঠান বুঝায়। তো এই সকল প্রতিষ্ঠান এরা পরস্পরকে একটি নজরদারী ও ভারসাম্যের মধ্যে রাখে। সরকার যখন দেশের আদর্শ ও নীতির বাহিরে কোন কাজ করে, তখন এই সকল প্রতিষ্ঠান সরকারের সমালোচনা করে, সরকার সংবিধান পরিপন্থী কোন আইন বা কাজ করলে বিচার বিভাগ তাতে হস্তক্ষেপ করে, মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীরা সমালোচনার পাশাপাশি উপদেশ প্রদান করে, জনগণ প্রতিবাদ করে এতে সরকারকে স্বেচ্ছাচারিতা থেকে ফিরে আসতে বাধ্য করে। এর ফলে ক্ষমতা কেবল একজনের মধ্যে কেন্দ্রীভূত থাকে না। কারণ, ক্ষমতা এককেন্দ্রিক হলে দেশে সুশাসন ও ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হয়, জনগণের ন্যায়সঙ্গত স্বাধীনতা খর্ব হয়। এতে সরকার ধীরে ধীরে স্বৈরাচারী হয়ে উঠে। একসময় রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। এরকম নজীর অহরহ আছে।

.

এজন্য যখন কোন দেশে স্বৈরাচার সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন ঐ সরকারের প্রথম কাজ থাকে সরকারকে নজরদারী ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এমন সকল প্রতিষ্ঠানকে নিজের করায়ত্ত করা। এটা সকল স্বৈরাচারী সরকারই করে থাকে। যেমনঃ বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকার। এরা দেশের আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবী সহ সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। ভারতের নরেন্দ্র মোদী সরকারও একই পথে হাঁটার চেষ্টায় আছে।

.

ট্রাম্প আমেরিকাতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ইউরোপ আমেরিকার আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, মিডিয়া বাস্তবেও তুলনামূলক অনেক স্বাধীন ও শক্তিশালী। ট্রাম্প এই সব প্রতিষ্ঠানকে জোর করে তার পক্ষে কথা বলানোর চেষ্টা করেছে। ট্রাম্প পুনরায় প্রেসিডেন্ট হলে এই সব স্বৈরাচার আরো বাড়তে পারে। ফলে আমেরিকাতে সুশাসন ও ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এরকম হলে আমেরিকা তার আদর্শ হতে বের হয়ে যাবে, এতে একসময় আমেরিকার জনগণ ও মিত্ররা মুখ ফিরিয়ে নিবে। এভাবেই ট্রাম্পের মাধ্যমে আমেরিকা আভ্যন্তরীণভাবে দূর্বল হয়ে পড়তে পারে। শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী যেভাবে তাদের দেশকে দূর্বল করেছে, ট্রাম্প সেটাই করতে চাচ্ছে। এতে রাষ্ট্র দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে পারবে না।

.

ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহির বিখ্যাত একটি উক্তি আছে। তা হলোঃ

«مجموع الفتاوى» (28/ 63):

«” {الله ينصر الدولة العادلة وإن كانت كافرة ولا ينصر الدولة الظالمة وإن كانت مؤمنة} “»

“নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা ন্যায়পরায়ণ রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখেন যদিও তা কাফের রাষ্ট্র হয়। কিন্তু, আল্লাহ তায়ালা জালিম রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখেন না যদিও তা মুমিনদের রাষ্ট্র হয়”। -মাজমুউল ফাতাওয়া: ২৮/৬৩

.

আমেরিকা যদিও বিশ্ব মোড়ল তবু তার অভ্যন্তরীণ অনেক সমস্যা আছে। এখনো বর্ণবাদী সমস্যা প্রকট, বন্দুক হামলা, যৌন হয়রানি, দারিদ্র্যতা, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, জীবনযাত্রায় ব্যয় বৃদ্ধি, ডিভোর্স সহ নানান রকম সমস্যা রয়েছে।

.

দ্বিতীয় প্রেক্ষাপটঃ

.

আন্তর্জাতিকভাবে আমেরিকা বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে চুক্তির মাধ্যমে তার মিত্র তৈরি করে প্রভাব প্রতিপত্তি ধরে রেখেছে। ইউরোপকে রাশিয়ার আক্রমণ হতে রক্ষায় ন্যাটো গঠন, এশিয়াতে কোয়াড গঠন, তাছাড়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান আমেরিকার মিত্র, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকে মিত্র তৈরি করে প্রভাব ধরে রেখে বিশ্ব শাসন করছে। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসলে আমেরিকার এই সকল মিত্রদের সাথে সম্পর্ক তিক্ত হতে পারে, ফলে মিত্ররা আমেরিকার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে, ট্রাম্পের কারণে তা মারাত্মক ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে। কেননা সে বারবার ন্যাটো সহ অন্যান্য মিত্র ও চুক্তির ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য করে আসছে।

.

এখন মূল আলোচনায় আসা যাক। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে মুসলিমদের কতটুকু লাভ-ক্ষতি হবে তা দেখা যাক। বিশ্বে নতুন শক্তির উত্থানের জন্য খুবই জরুরী হলো, বর্তমান শক্তির উপস্থিতি বা কর্তৃত্ব না থাকা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনেও এরকম ঘটনা রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়ে আরবে কোন সুপার পাওয়ারের উপস্থিতি ছিল না। রোমানদের কিংবা পারস্যদের কোন ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব আরবে ছিল না। যার কারণে তৎকালীন সময়ে মুসলিমদের উত্থান অনেক সহজ ছিল। এটা আল্লাহ তায়ালার একটি সুন্নাহ।

.

তাই মুসলিমদের উত্থানের জন্য আমেরিকার শক্তি খর্ব হওয়া খুবই জরুরী। আমেরিকা যত তাড়াতাড়ি তার খোলসে ঢুকে যাবে অর্থাৎ বিশ্বের মোড়লগিরির ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে, মুসলিমদের সুপার পাওয়ার হওয়াটা তত তাড়াতাড়ি হবে। আল কা-য়ে*দা-র কৌশল হলো, কুফর নামক সাপের মাথা আমেরিকাকে তার স্বার্থে ক্রমাগত আঘাতের মাধ্যমে দূর্বল করে তার খোলসে ঢুকিয়ে দেওয়া। যাতে আমেরিকার অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। এতে মুসলিমদের পুনঃউত্থান ত্বরান্বিত হবে ইনশা আল্লাহ।

.

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ট্রাম্পের কারণে আমেরিকান মুসলিমদের অসুবিধা হবে কিনা? হ্যাঁ, ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়াতে আমেরিকান মুসলিমরা বিভিন্ন অসুবিধা ও হয়রানির শিকার হবে এটা সত্য। বিশ্বের যেকোন প্রান্তের মুসলিমদের সামান্য কষ্টও হোক এটা আমরা কখনোই চাই না। চাই সে মুসলিম গুনাহগার হোক বা পরহেজগার। এমনকি পৃথিবীর যেকোন প্রান্তরে একজন কাফিরের উপরও যদি জুলুম হয়ে থাকে, তাও আমাদেরকে ব্যথিত করে এবং আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সামর্থ্য দিলে আমরা তাদেরকেও জুলুম থেকে রক্ষা করতে আপ্রাণ চেষ্টা করবো ইনশা আল্লাহ।

.

আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ

অর্থঃ তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানব জাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে। (সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১১০)

.

প্রত্যেকটি কাজের লাভ-ক্ষতি দুটোই থাকে। আর, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসলে সামগ্রিকভাবে মুসলিমদের ক্ষতির চেয়ে লাভটাই বেশি হবে। এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়, তা হচ্ছে: ট্রাম্পের কারণে সাময়িক ৪/৫ বছর হয়ত আমেরিকার মুসলিমদের কিছু অসুবিধা হবে, কিন্তু ট্রাম্পের কারণে আমেরিকার যে মারাত্মক ক্ষতি হবে, তা গোটা মুসলিম উম্মাহর জন্য স্থায়ীভাবে লাভ হবে এবং মুসলিমদের উত্থানের পথ সুগম হবে ইনশা আল্লাহ।

.

আমেরিকার পতনের মাধ্যমে বিভিন্ন মুসলিম দেশে ইসলামী ইমারাহ বা খিলাফাহ প্রতিষ্ঠিত হলে মুসলিমদের পাশাপাশি কাফেররাও সুখে শান্তিতে থাকবে। গোটা মানবজাতি ও দুনিয়ার জীবজন্তুরাও নিরাপদ থাকতে পারবে ইনশা আল্লাহ। তাই ট্রাম্পের বিজয়ী হওয়ায় আমেরিকান মুসলিমদের সাময়িক অসুবিধা হলেও আমেরিকার শক্তিক্ষয়ের মাধ্যমে ভবিষ্যতে গোটা উম্মাহর জন্য তা অনেক বেশি কল্যাণকর হতে পারে ইনশা আল্লাহ। বাইডেনের মতো মানুষ যদি আমেরিকার ক্ষমতায় থাকে, তাহলে আমেরিকার মুসলিমদের কিছু সুবিধা হলেও গোটা উম্মাহর জন্য তা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে। বারাক ওবামা আমেরিকার সব প্রেসিডেন্টের চাইতে মুসলিমদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে, অথচ সে আমেরিকার মুসলিমদের কাছে খুব জনপ্রিয় ছিলো। তাই ট্রাম্পের মতো লোক আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হলে আমেরিকার যে ক্ষতি করবে, তা মুসলিম উম্মাহর জন্য সামগ্রিকভাবে ক্ষতির চেয়ে লাভ অনেক বেশি হবে।

.

তবে, এই বিশ্লেষণ এবং অনুমান স্বাভাবিক ঘটনাপ্রবাহের আলোকে জন্নে গালেব বা প্রবল ধারণার ভিত্তিতে করা হচ্ছে। কিন্তু রাজনীতিতে সুনিশ্চিত করে ভবিষ্যৎবাণী করা সম্ভব নয়। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসা সত্ত্বেও আমেরিকা পরবর্তীতে তার ক্ষয়-ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারা অসম্ভব নয়। তাই উপরোক্ত অনুমানগুলোকে অকাট্য ও সুনিশ্চিত মনে করার পরিবর্তে সম্ভাব্যতার দৃষ্টিকোণ থেকেই বিবেচনা করতে হবে।

.

অপরদিকে ভারতের নরেন্দ্র মোদী আবারো ক্ষমতায় আসলে উপমহাদেশের মুসলিমদের, বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশের মুসলিমদের লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে। মোদী সরকার ইসরাইলের প্লান ফলো করে পরিকল্পিতভাবে মুসলিম নিধনে লেগেছে। তাই এখানে একতরফাভাবে উপমহাদেশের মুসলিমদের উপর কেবল জুলুম-ই বাড়বে। তাই মোদী সরকার আবার ক্ষমতায় আসলে ভারত ও বাংলাদেশের মুসলিমদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে। (আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন)

.

অনেকে আবেগের বশে মোদী আসাকে ভালো মনে করেন। মনে করেন যে, মোদী আসলে নির্যাতনের শিকার হয়ে উম্মাহ জাগ্রত হবে। নিজ উম্মাহর প্রতি এ ধরণের চিন্তা খুবই নিকৃষ্ট। আপনি নিশ্চয় চাইবেন না আপনার পিতাকে কেউ হত্যা করে, আপনার বোনের গায়ে হাত দিয়ে আপনার গাফিল হয়ে থাকা ভাই জাগ্রত করুক! তাহলে কীভাবে আমরা এই উম্মাহর পিতা আর বোনদের ব্যাপারে এমনটি ভাবি!!! মাআযাল্লাহ!

.

আজকের আলোচনা এই পর্যন্তই। আল্লাহ তায়ালা কাফের মুশরিকদের অত্যাচার নির্যাতন হতে মুসলিম উম্মাহকে রক্ষা করুন। আমীন।

~আবু উবাইদাহ আল হিন্দী
করেছেন আবু উবাইদাহ  
কিছু পদ্ধতি এমন যা দাওয়াতের জন্য ক্ষতিকর
.
এ বিষয়ে আলোচনা করার আগ্রহ তৈরি হয়েছে ইন্টারনেটে জিহাদের প্রতি দাওয়াত বিষয়ক কিছু পেইজ দেখে। এসকল পেইজের পরিচালকগণ একদিকে প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। কারণ তারা এই চতুর্মুখী ফেতনার সময়ে জিহাদের দিকে দাওয়াতের ঝাণ্ডা উঁচু করে বাতিলের বিরোধিতা করছে। এমনকি তারা এই বাতিল শাসনব্যবস্থা দূর করার উপায় একমাত্র জিহাদকেই সাব্যস্ত করেছে। এদিক থেকে তাদের যত প্রশংসাই করা হোক না কেন তা কম হবে। কারণ, বর্তমানে যেখানে ‘যামানার ফেরাউনদের’ অসন্তুষ্টি থেকে বাঁচার এবং তাদের মন জয় করার জন্য বড় বড় ব্যক্তিরাও প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। সেখানে এই ভাইয়েরা জালেমদের প্রভাবে প্রভাবিত না হয়ে, নিজেদের জান হাতে নিয়ে তাদের জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছে।
.
সেই সাথে জিহাদের দাওয়াতের বিরোধিতাকারীদেরকে তাদের পক্ষ থেকে দেওয়া খণ্ডন দেখে তাদের ইখলাসেরও প্রমাণ পাওয়া যায়। এই ভাইদের ইখলাসের সামনে শ্রদ্ধায় আমাদের মাথা ঝুঁকে যায়। কিন্তু তার পরিণতি দেখে অতি আফসোসের সাথে বলতে হয় - এই সম্মানিত ভাইদের কারো কারো দাওয়াতের পদ্ধতি ও খণ্ডনের তরিকা মোটেও সঠিক নয়।
.
আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে কাফেরদের সাথেও হেকমত, উত্তম নসিহত ও সর্বোত্তম পদ্ধতিতে আলোচনা-পর্যালোচনা ও মুনাযারা করার নির্দেশ দিয়েছেন। ফেরাউনের সাথে পর্যন্ত দাওয়াতের ক্ষেত্রে নরম ব্যবহারের তাকিদ করেছেন। কিন্তু এসকল পেইজে কী আম, কী খাস, ওলামায়ে কেরাম ও দ্বীনদার লোকদের ব্যাপারেও অত্যন্ত কঠিন এবং বিদ্রূপাত্মক কথা লেখা হয়। যে সকল মতবিরোধকারীদেরকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসার চেষ্টার দরকার ছিলো, তাদেরকে এমনভাবে সম্বোধন করা হয় যার মাঝে কোন ধরনের সহানুভূতি ও কল্যাণকামীতার ঘ্রাণও থাকে না।
.
যে কোন মুসলমানকেই নিন্দা করা, বিদ্রূপ করা, অভিশাপ দেয়া হারাম। কিন্তু দেখে মনে হয় যেন এটাই এক্ষেত্রে দাওয়াতের আসল পদ্ধতি। যে ব্যক্তি একশতে একশ আমার মতকে সমর্থন করবে সে আমার আপন, আর যে সামান্য একটু বিরোধিতা করবে সেই দুশমন! তার মুসলমান হওয়ার ব্যাপারেই সন্দেহ! তাকফিরে মুআয়্যিন (তথা নির্দিষ্টভাবে কাউকে কাফের আখ্যায়িত করা) এর কাজ, যা গভীর ইলমের অধিকারী, বিচক্ষণ ও প্রজ্ঞার অধিকারী আলেমদের কাজ, এখানে তা খুব হালকাভাবে দেখা হয়। বিভিন্ন ব্যক্তি ও দলের ওপর খুব সহজেই কুফুরির ফতোয়া দিয়ে দেয়া হয়। এখানে বিরোধিতাকারী দ্বীনদারদের প্রতি কল্যাণকামিতা নেই, কোন হারাম কাজে সতর্ক করেই ক্ষান্ত হওয়া নেই। আছে শুধু গালমন্দ, নিন্দা, তাদের ব্যাপারে এমন এমন শব্দ ব্যবহার করা হয়, যা মুখে আনাও অসম্ভব। নব্য মুরজিয়া, ধর্মীয় হিজড়া এমন আরও অশ্রাব্য কথাবার্তা।
.
দাওয়াতের এ পদ্ধতি আইএস এর আত্মপ্রকাশের পূর্বেও অনেক জোরেশোরে চালু ছিলো। যখন আইএস আত্মপ্রকাশ করল তখন জিহাদের পথে আহবানকারী এই সকল দাঈ এই ফেতনায় জড়িয়ে পড়ে। সাথে সাথে এর প্রভাবে প্রভাবিত ব্যক্তিরাও এই ফেতনায় লিপ্ত হয়ে গেলো। খুব কম সংখ্যক লোকই প্রকাশ্যে এই খারেজিদের দলভুক্ত হওয়া থেকে মুক্ত ছিল।
.
বাস্তবতা হলো দাওয়াত ও জিহাদের সফরে কলব যখন ইনসাফ থেকে সরে যায় তখন বিনয় অহংকারে, ভাষার শালীনতা অশালীনতায় রূপান্তরিত হয় এবং অন্তরের নম্রতা কাঠিন্যের রূপ ধারণ করে। তারপর সে ব্যক্তি নিজেও গোমরাহির পথে চলে এবং অন্যকেও গোমরাহির পথ প্রদর্শন করে।
.
আমি অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলছি, এই ভাইয়েরা বিষয়টি বুঝুক আর আর না বুঝুক, ইতিহাস সাক্ষী এই ধরণের দাওয়াতের দ্বারা জিহাদের খুব কমই ফায়দা হয়েছে। কারণ এখানে দাওয়াত কম হয় আর লোকদেরকে জিহাদ থেকে বিমুখ করা হয় বেশি। এ ধরণের দাওয়াত জিহাদের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদেরকেও অনেক সময় পথভ্রষ্ট করে দেয় এবং তাদেরকে সীমালঙ্ঘন ও তাকফিরের অন্ধকারে নিমজ্জিত করার মাধ্যম হয়।
.
আমি আবারও বলছি, উল্লিখিত ভাইদের ইখলাস নিয়ে কোন কথা বলছি না। কিন্তু শুধুমাত্র ইখলাস কখনো যথেষ্ট নয়। ইখলাসের সাথে সাথে আমাদের ফিকির ও আমল সুন্নত অনুযায়ী হওয়া চাই। আল্লাহর কাছে যেই ইখলাস গ্রহণযোগ্য তা হলো, আমরা হক্ক জেনে তার সামনে আমাদের মাথা ঝুঁকিয়ে দিব। আত্মসমালোচনা হবে আমাদের মূলভিত্তি। আমাদের কথা ও কাজ যেন শরিয়ত অনুযায়ী হয়, সেজন্য সর্বদা চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু এর বিপরীতে আমরা যদি ওই সকল কাজকে সঠিক বলি, যাকে আমাদের অন্তর সঠিক বলে তাহলে তা ওই ইখলাস নয় যা আল্লাহর নিকট নাজাতের মাধ্যম; বরং এটা হবে নফসের চাহিদা পূরণ, যা সমস্ত খারাবির মূল। নফসের অনুসরণ মানুষকে গোমরাহি ও অপবিত্রতার এমন গভীরে পৌঁছে দেয়, যার পরিণতি দুনিয়াতে পশুত্ব এবং আখেরাতে জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুন। আল্লাহ আমাদেরকে নফসের চাহিদা অনুযায়ী চলা থেকে হেফাযত করুন। দাওয়াত ও জিহাদের ময়দানে, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত নিজেকে শরীয়তের অনুগামী করে রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সুতরাং জিহাদের পথে আহবানকারী দাঈগণের জন্য জরুরি হল, আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দাওয়াতের পদ্ধতি বোঝা এবং সে অনুযায়ী আমল করা। আল্লাহর মনোনীত পদ্ধতিতেই জিহাদের খেদমত হতে হবে। অতএব দাওয়াতের ওই পদ্ধতি থেকে বেঁচে থাকতে হবে যা দাওয়াতের কোন পদ্ধতিই নয় এবং যার দ্বারা জিহাদের খেদমতের চাইতে ক্ষতিই বেশি হয়।
.
দাওয়াতের সঠিক পদ্ধতি
আল্লাহ তা’আলা যেখানেই দাওয়াতের আদেশ করেছেন (ادع الى سبيل ربك) অর্থাৎ দ্বীন ও দ্বীনের কাজের প্রতি দাওয়াতের কথা বলেছেন, সেখানে তার পদ্ধতিও বলে দিয়েছেন। এ পদ্ধতি হলো হেকমত, উত্তম ওয়াজ নসিহত এবং আকর্ষণীয় পদ্ধতিতে মুনাযারা করা।
আল্লাহ তা’আলার ঘোষণা,
ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ
অর্থ: “তুমি তোমার রবের পথের দিকে আহ্বান কর হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা, আর (যদি কখনো বিতর্কের প্রয়োজন হয় তবে) তাদের সাথে বিতর্ক কর সর্বোত্তম পন্থায়। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক যারা তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে তাদের ব্যাপারে সম্যক অবগত, আর যারা সৎ পথে প্রতিষ্ঠিত তাদের ব্যাপারেও সম্যক অবগত”। -সুরা নাহল-১২৫
.
আল্লামা শাব্বির আহমদ উসমানী রহিমাহুল্লাহ এই আয়াতের তাফসীরে বলেন:
এই আয়াতে স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে, কীভাবে আল্লাহর পথে মানুষকে দাওয়াত দিতে হবে। এখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তিনটি পদ্ধতির কথা বলেছেন –
১. হেকমত
২. মাওয়ায়েযে হাসানা
৩. জিদালে হাসানা।
প্রত্যেকটির বিবরণ নিম্মে উল্লেখ করা হল:
১. হেকমত:
হেকমত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, খুব মজবুত বিষয়ও অকাট্য প্রমাণের মাধ্যমে, প্রজ্ঞার সাথে উপস্থাপন করা। যা শুনে বিবেক-বুদ্ধির অধিকারী জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ ও ইলম পিপাসু আলেমগণ মাথা ঝুঁকিয়ে দেয়। জাগতিক দর্শন তার সামনে ম্লান হয়ে যায়। হেকমত দ্বারা ওহী থেকে প্রাপ্ত কোন বিষয়কে এমনভাবে উপস্থাপন করা বোঝায়, যেন জ্ঞানগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে কোন ধরনের খুঁত কেউ ধরতে না পারে।  
.
২. মাওয়ায়েযে হাসানা:  
অন্তর নরমকারী ও প্রভাব বিস্তারকারী নসিহতকে মাওয়ায়েযে হাসানা বলে। এর মধ্যে ভাষা মাধুর্য থাকবে, সেই সাথে অন্তর বিগলিত করার মতো প্রাণও থাকতে হবে। ইখলাস, সহমর্মিতা, দয়া ও উত্তম আখলাকের সাথে সুন্দরভাবে কৃত নসিহত দ্বারা পাথরের মতো শক্ত অন্তরও মোমের মতো গলে যায়। মৃতও প্রাণ ফিরে পায়, নিরাশাগ্রস্ত জাতি গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। উৎসাহ ও ভীতিপ্রদর্শনমূলক ওয়াজ শুনে জান্নাতের দিকে অস্থির চিত্তে দৌড়ানো শুরু করে। বিশেষ করে যাদের অন্তর হক্কের জযবায় ভরপুর, কিন্তু উঁচু চিন্তা-চেতনা ও বেশি মেধার অধিকারী নয়, তাদের মধ্যে প্রভাব বিস্তারকারী ওয়াজ নসিহত দ্বারা আমলের জন্য এমন এক আগ্রহ তৈরি করা যায় যা উঁচু স্তরের গবেষণালব্ধ ইলমী তাহকিকের মাধ্যমে সম্ভব নয়।
তবে, দুনিয়াতে একশ্রেণির মানুষ আছে যারা সবসময় সব বিষয়ে নাক গলায়। এরা প্রত্যেক কথায় প্যাঁচ ধরে আর অযথা তর্ক করে। এসমস্ত লোকেরা হেকমতপূর্ণ কথা শোনে না, ওয়াজ নসিহতও কবুল করে না। তারা চায় সব বিষয়েই তর্ক-বিতর্ক চলতে থাকুক।
.
৩. জিদালে হাসানা:
অনেক সময় বুঝমান, সত্যানুসন্ধানী ব্যক্তিকেও সন্দেহ ঘিরে ধরে। আলোচনা ছাড়া তারও এতমিনান হয় না। তাদের জন্য হল জিদালে হাসান। বিষয়টিকে আয়াতে এভাবে বলা হয়েছে وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ অর্থাৎ যদি এমন পরিস্থিতি হয় তাহলে সর্বোত্তম পদ্ধতিতে ভদ্রতা, সঠিক দিকনির্দেশনা ও ইনসাফের সাথে মুনাযারা করবে। প্রতিপক্ষকে কোন অভিযোগ দিলে উত্তম পদ্ধতিতে দিবে। অযথা অন্তরে আঘাতকারী কথাবার্তা বলে ঝগড়ার পরিবেশ তৈরি করবে না। বিষয়টি এমনভাবে পেশ করতে হবে যেন অনেক দূর পর্যন্ত না গড়ায়। লোকদেরকে বোঝানো ও সত্য প্রতিষ্ঠা আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ। কঠোরতা, খারাপ ব্যবহার, চাপাবাজি ও গোয়ার্তুমি দ্বারা কোন ফায়দা হয় না।
.
মুফতি শফি রহিমাহুল্লাহ দাওয়াতের পদ্ধতির ক্ষেত্রে আম্বিয়ায়ে কেরামের তরিকার বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন: আল্লাহর পথে আহবান মূলত নবীগণের কাজ। ওলামায়ে কেরাম এ দায়িত্ব পালন করেন নবীদের নায়েব বা প্রতিনিধি হিসেবে। এজন্য জরুরি হলো, দাওয়াতের পদ্ধতি ও আদবও নবীদের থেকে শিখে নেওয়া। যে দাওয়াত তাদের তরিকার ওপর থাকবে না, তা দাওয়াতই নয়; বরং তা লড়াই বা ঝগড়ার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। নববী দাওয়াতের মূলনীতি কেমন তা আমরা মুসা ও হারুন আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তাআলা যে নির্দেশ দিয়েছেন তা থেকে শিখতে পারি। আল্লাহ তা’আলা বলেন:
فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَيِّنًا لَعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَى
অর্থাৎ ফেরাউনের সাথে নরম কথা বল, হয়ত সে বুঝবে অথবা ভীত হবে। [সুরা ত্বা-হা ২০:৪৪]
.
প্রত্যেক দাঈর সর্বদা এ বিষয়টি মাথায় রাখা উচিৎ যে, ফেরাউনের মত অহংকারী কাফের, যার মৃত্যুও আল্লাহর ইলম অনুযায়ী কুফর অবস্থায়ই হবে, তার ক্ষেত্রেও আল্লাহ তাআলা নিজের দাঈকে নরম ভাষায় কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন।
বর্তমানে আমরা যাদেরকে দাওয়াত দেই, তারা কেউ ফেরাউনের চেয়ে বড় গোমরাহ নয়। আর আমাদের কেউ মূসা ও হারুন আলাইহিমাস সালামের মতো দাঈও নই। অতএব যেই অধিকার আল্লাহ তা’আলা তাঁর দুই নবীকে দেননি যে, “মাদউর সাথে শক্ত ব্যবহার করবে, তাকে অপমান করবে” - সে অধিকার আমাদের কোথা থেকে অর্জন হয়ে গেলো?!
.
টিকা –

[১] সুরা নাহল, ১৬:১২৫
.
[২] সুরা ত্বা-হা ২০:৪৪

কুরআনে কারীমে নবীগণের দাওয়াত ও তাবলীগ এবং কাফেরদের সাথে মুনাযারার আলোচনা অনেক আছে। কোথাও দেখা যায় না যে, ইসলামের বিরোধিতাকারীদের জবাবে কোন নবী কখনও কোন শক্ত ভাষা ব্যবহার করেছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো এবিষয়েও খেয়াল রাখতেন যে, মাদউর অপমানও যেন না হয়। তাই কাউকে যদি তিনি কোন ভুল বা অন্যায় কাজে লিপ্ত দেখতেন, তখন তাকে কিছু না বলে সাধারণ মজলিসে বলতেন – “লোকদের কি হলো যে, তারা এমন এমন করে?”। এই সাধারণ সম্বোধনে যাকে শোনানোর উদ্দেশ্য সেও শুনতো এবং নিজের সংশোধনের ফিকিরে লেগে যেত।
.
দাওয়াতের উদ্দেশ্য শুধু অন্যের সমালোচনা করা নয়, বরং অন্যকে নিজের কাছে ডেকে আনা। এজন্য পবিত্র কুরআনে নবীগণের দাওয়াতের অধিকাংশই يا قوم ‘ইয়া কওমি’ (হে আমার সম্প্রদায়!) শিরোনামে এসেছে।  নবীগণ ‘হে আমার সম্প্রদায়’ এই শব্দের দ্বারা প্রথমেই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের কথা উল্লেখ করেছেন। এরপর তাদের সংশোধনের আলোচনা করেছেন যে, – ‘আমরা তো ভ্রাতৃত্বের দিক থেকে একই জাতের মানুষ, আমাদের মাঝে তো কোন দূরত্ব নেই’ একথা বলেই তাদের সংশোধনের কাজ শুরু করতেন।
.
রসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোম সম্রাটের নামে যে চিঠি পাঠিয়েছেন, তাতে তাকে ‘আযীমুর রোম’ তথা রোমের সম্মানিত বাদশা উপাধীতে সম্বোধন করেছেন। এখানে তাকে “রোমের সম্মানিত বাদশা” বলে সম্মান করেছেন। আর এই ‘আযীমুর রোম’ শব্দটি আল্লাহর রাসুল রোম সম্রাটের জন্য ব্যবহার করে তার সম্মানের স্বীকৃতি দিয়েছেন। তার এই সম্মানের স্বীকৃতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোমের অধিবাসীদের জন্য দিয়েছেন, নিজের জন্য নয়। তারপর কোরআনের নিম্মোক্ত আয়াতাংশটি শিরোনাম হিসেবে উল্লেখ করে দাওয়াত দিয়েছেন।
يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْاْ إِلَى كَلَمَةٍ سَوَاء بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلاَّ نَعْبُدَ إِلاَّ اللّهَ
অর্থ: “হে আহলে-কিতাব! একটি বিষয়ের দিকে আস যা আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করবো না। [সুরা ইমরান ৩:৬৪]
.
এখানে প্রথমে পরস্পরের একমত হওয়ার একটি বিষয়কে উল্লেখ করা হয়েছে। তারপর খ্রিস্টানদের ভুলগুলো আলোচনা করা হয়েছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের সীরাহ নিয়ে যদি ফিকির করা হয়, তাহলে তালীম ও দাওয়াতের এধরণের অনেক আদব ও উসুল পাওয়া যায়। বর্তমানে তো দাওয়াত ও ইসলাহ এবং আমর বিল মারুফ নাহি আনিল মুনকারের কোন খেয়ালই নেই। আর যারা দাওয়াতের কাজে লিপ্ত আছে, তারা শুধু বাহাস-মুনাযারা, তর্ক-বিতর্ক, প্রতিপক্ষকে অভিযোগ করা, কথায় আটকানো এবং তাকে অপমান করাকেই দাওয়াত বানিয়ে নিয়েছে। যা সুন্নতের খেলাফ হওয়ার কারণে কখনই প্রভাব বিস্তারকারী ও উপকারী হয় না। তারা মনে করে আমরা ইসলামের অনেক খেদমত করে ফেলেছি। বাস্তবে তারা মানুষকে দূরে সরানোর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
.
উক্ত আয়াতের তাফসীর থেকে জানা যায় যে, ইসলামের আসল উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়া। আর এই দাওয়াতের মূলনীতি দুইটি, হেকমত এবং মাওয়ায়েযে হাসানা। তর্ক যদি করতে বাধ্য হয় তাহলে সেখানে ‘আহসান’ তথা উত্তম পন্থায় করার শর্তসহ জায়েয বলেছেন। কিন্তু এটি দাওয়াতের কোন স্বতন্ত্র বিভাগ নয়, বরং এটি দাওয়াতের নেতিবাচক দিকেরই একটি প্রচেষ্টা; দাওয়াত ‘আহসান’ (সর্বোত্তম) হওয়ার জন্য জরুরি হলো বিষয়টি বক্তার জন্য ক্ষতিকর না হওয়া। অর্থাৎ দাওয়াতের মধ্যে বদ-আখলাক তথা হিংসা, বিদ্বেষ, অহংকার, পদমর্যাদার লোভ ইত্যাদির মিশ্রণ থাকতে পারবে না, যা বাতেনি কবিরা গুনাহ। দাওয়াত কোমলতার সাথে কল্যাণকামিতা ও সহমর্মিতার আগ্রহ নিয়ে হওয়া উচিৎ। সেই সাথে শ্রোতার অবস্থা অনুযায়ী স্পষ্ট দলিলের মাধ্যমে হওয়া উচিৎ। শ্রোতাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা থেকে পরিপূর্ণ বেঁচে থাকতে হবে।  
.
ইমাম গাজালি রহিমাহুল্লাহ বলেন: “যেমনিভাবে মদ পান করা সমস্ত খারাবীর মূল -নিজের আত্মিক খারাবী এবং বহু শারীরিক খারাবীর জন্ম দেয়, তেমনিভাবে তর্ক বিতর্কের মধ্যে যদি উদ্দেশ্য থাকে অপর পক্ষের ওপর বিজয়ী হওয়া, নিজের ইলমকে অন্যের সামনে প্রকাশ করা, তাহলে এটাও অন্তরের সমস্ত খারাবীর মূল। কারণ এর দ্বারা অন্তরে অনেক রোগ সৃষ্টি হয়। হিংসা, বিদ্বেষ, অহঙ্কার, গিবত, অন্যের দোষ তালাশ করা, অন্যের দুঃখে খুশি হওয়া, অন্যের সুখে কষ্ট পাওয়া, সত্য গ্রহণে অহঙ্কার পোষণ ইত্যাদি গোনাহের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও এই জাতীয় রোগে আক্রান্ত লোকেরা অপর পক্ষের কথায় চিন্তা-ফিকির বাদ দিয়ে পাল্টা উত্তর দেয়ার চেষ্টায় লিপ্ত হয় এবং তা করতে
করেছেন আবু উবাইদাহ  
তাকফীর ও তুচ্ছ করা ছাড়াও সমালোচনা ও সংশোধন সম্ভব?
.
মাসআলা হলো; এই কুফুরি শাসনব্যবস্থায় শরয়ী তাবীলের মাধ্যমে, দ্বীনের খেদমতের নামে কেউ যদি অংশ গ্রহণ করে তাহলে জিহাদের আলেমদের মতে এটি বাড়াবাড়ি, গুনাহের কাজ এবং হারাম। তার পুরোপুরি বিরোধিতা করা হবে এবং দাওয়াতের ভাষায় এই ব্যক্তিদের প্রকাশ্যে সমালোচনা করা হবে। কিন্তু তাদেরকে কাফের বলা হবে না। এই ব্যক্তিরা সবাই এক স্তরের নয়। কোন বিশেষ নেতা এমনও থাকতে পারে, যে দ্বীন ও জিহাদের  ক্ষতি করায় অনেক অগ্রসর অথবা তার ব্যক্তিগত কোন কাজ তার ঈমানের দাবির বিপরীত। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওই ব্যক্তিকে কাফের ফতোয়া দেয়া থেকে আমাদের ভাষাকে সংযত করবো। তার বিরুদ্ধে এ ধরণের ফতোয়া দেয়া জিহাদের দাওয়াতের জন্য ক্ষতির কারণ।  
 আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের পূর্ববর্তী আলেমগণ সর্বদা কোন বিশেষ ব্যক্তি অথবা গ্রুপকে কাফের ফতোয়া দেয়ার পূর্বে দাওয়াতের লাভ-ক্ষতির দিকটি বিবেচনায় রাখতেন। যদি কোন ব্যক্তি ইসলামের পোশাক গায়ে জড়াতো অর্থাৎ মুসলিম দাবী করত অথচ সে কুফুরি গ্রহণ করেছে, তাহলে পূর্ববর্তী আলেমগণ দেখতেন তাকে স্পষ্ট কাফের ফতোয়া দেয়া বা হত্যা করা দ্বারা দাওয়াতের ক্ষতি হবে নাকি লাভ হবে? যদি ক্ষতি হওয়ার আশংকা বেশি থাকত তাহলে নাম ধরা ছাড়া তার সমালোচনা করা হত। সংশোধনের চেষ্টা করা হত। তার খারাবী বন্ধ করে দেয়া হত। কিন্তু তাকে নির্দিষ্ট করে তাকফীরও করা হত না। তাকে হত্যা করাও হত না।
আমরা রঈসুল মুনাফেকীন আব্দুল্লাহ বিন উবাই’র সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণের দিকে লক্ষ করি। সাহাবীগণ যখন বললেন, ‘আমরা তাকে হত্যা করি?’ তখন তিনি বললেন, ‘তাকে ছাড়, মানুষ বলবে মুহাম্মদ তাঁর সাথীদের হত্যা করে’।
.
আরেকটি বিষয় লক্ষ করি, ইবনে উবাই আনসারিদের খাজরাজ গোত্রের ছিল। এক গোত্র হওয়ার কারণে খাজরাজের সরদার সাআদ বিন উবাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু সাহাবী হওয়া সত্ত্বেও এটা সহ্য করেননি যে, অন্য গোত্রের কোন লোক তাকে (ইবনে উবাইকে) হত্যা করবে। এই কারণেই আউস গোত্রের সরদার সাআদ বিন মুআয রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আব্দুল্লাহ বিন উবাইকে হত্যা করার অনুমতি চাইলেন, তখন সাআদ বিন উবাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু তার ওপর রাগ করলেন এবং এমন কাজ করতে নিষেধ করলেন।
.
এই ঘটনা সহীহ মুসলিমমে এসেছে। সেখানে আয়শা রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর একটি কথা বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, “সাআদ বিন উবাদা ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু ওই সময় তার আত্মমর্যাদাবোধ জেগে উঠেছিল। তিনি চাচ্ছিলেন যদি হত্যা করার আদেশ দেয়া হয় তাহলে যেন তাদেরকে আল্লাহর রাসুল আদেশ দেন। তারাই ইবনে উবাইকে হত্যা করবে। অন্য গোত্রের কেউ হত্যা করবে এটা তারা চাচ্ছিলেন না। ঠিক এমন কথাই বলেছিলেন ইবনে উবাই এর মুসলমান ছেলে ‘আব্দুল্লাহ’ রাদিয়াল্লাহু আনহু ।
যখন ইবনে উবাই এর খারাবী বেড়ে গেলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কষ্টের বিষয়টি তিনি বুঝতে পারলেন, তখন তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন, “ইয়া রাসুলাল্লাহ! যদি আমার পিতাকে হত্যা করতে চান তাহলে আমাকে আদেশ করুন। আমিই তা'র মাথা এনে আপনার সামনে রাখব। কিন্তু অন্য কেউ হত্যা করলে আমার আত্মমর্যাদাবোধে আঘাত লাগবে”।
.
সম্মানিত ভাইয়েরা!
.
বংশীয় এবং দলীয় সম্পর্ক খুব নাযুক। নিজের দলের কোন নে'তার সাথে দলের কোন সদস্যের মতবিরোধ থাকতে পারে - কোন এক পর্যায়ে সে তাকে খারাপও মনে করতে পারে। কিন্তু দলের বাহিরের কেউ ওই নে'তার নামে কোন খারাপ কথা বললে তার দলীয় অনুভূতি জেগে উঠে। বিশেষ করে দলটি যখন দ্বীনী দল হয় তখন অনুভূতিও তীব্র হয়। তাই এই নাজুকতার প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরি।
এই দ্বীনী দলের মধ্যে ভালো মানুষও আছে। তারা তাদের নেতাদের ভালোবাসে নেতাদের দুনিয়া পূজার কারণে নয়, বরং নেতাদের দ্বীনী খেদমতের কারণে বা দ্বীনী খেদমতের ওয়াদার কারণে। সুতরাং এই নেতাদেরকে কাফের ফতোয়া দিয়ে আমরা কীভাবে ধারণা করতে পারি যে, তার দলের লোকেরা আমাদের কথা শুনবে? আর তাদেরকে কাফের ফতোয়া দেয়ার দ্বারা অন্য দ্বীনদার ও জনসাধারণকে মোটেও প্রভাবিত করা যায় না।
.
সুতরাং আপনি যদি চান যে, তাদের এই রোগের চিকিৎসা করবেন, তাদেরকে গণতন্ত্রের কুফুরি বোঝাবেন, তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে নববী মানহাজে নিয়ে আসবেন, তাদেরকে এই খারাপ পথ থেকে ফিরাবেন, তাহলে সিরাতের অনুসরণ করুন। কাজের সমালোচনা করুন। কারো নাম উল্লেখ ব্যতীত, কাউকে কাফের ফতোয়া দেয়া ব্যতীত গণতন্ত্রের ভ্রান্ত হওয়ার দলিলাদি বর্ণনা করুন।
.
.
টিকা –
.
.
দাওয়াতের পদ্ধতি ও জিহাদি মানহাজের হেফাযত
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ
করেছেন আবু উবাইদাহ  
জানুয়ারি ২০২৪, বাংলাদেশ। এই স্থান-কালের প্রেক্ষাপট এখানকার শিক্ষিত সচেতন মুসলিমদের কাছে একেবারেই স্পষ্ট। কিন্তু মূল আলাপে যাবার আগে দীর্ঘকালীন ফায়েদার বিবেচনায় (খুবই সংক্ষেপে) প্রেক্ষাপটের প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো একবার উল্লেখ করে দেওয়াই সমীচীন মনে করছি ইন শা আল্লাহ।
.
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু মাস আগে থেকেই ক্ষয়িষ্ণু সাম্রাজ্য আমেরিকা বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। প্রচলিত গণতান্ত্রিক সিস্টেমকে হ্যাক করে পর পর তিনবার শাসনক্ষমতায় থাকার পর চতুর্থবার শাসনক্ষমতায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া আওয়ামী লীগ সরকারকে সাধারণ নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই আমেরিকা ভিসা নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্য অবরোধ সহ নানামুখী চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।
.
বলাই বাহুল্য, বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি - যারা কিনা আরেক সেক্যুলার জাতীয়তাবাদী দল - তাদের সাথেও আমেরিকার যোগসূত্রের বিভিন্ন গুঞ্জন ওঠে। বিএনপি-পন্থী অনেক অ্যাক্টিভিস্টরা স্পষ্টভাবেই আমেরিকার সাহায্যের ব্যাপারে খোলাখোলি কথা বলে যায়। এভাবে চলতে চলতে এটা অন্তত দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তারা আমেরিকার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের পতন করে শাসনক্ষমতায় যেতে চায়। আরও স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সুকৌশলী আমেরিকাও নিজের বিভিন্ন স্বার্থে সেবার বিএনপিকে শাসনক্ষমতায় দেখতে চায়। বিভিন্ন ঘটনা আর রটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো বিভিন্ন কর্মসূচী এবং আন্দোলন করতে থাকে।
.
একইসাথে গণতন্ত্রের মাধ্যমে ইসলামি শরিয়াহ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাওয়া বিভিন্ন ইসলামি দলও বিএনপির আন্দোলনের সাথে অনেকটাই একাত্নতা ঘোষণা করে। অবস্থা এমন হয় যে, গণতান্ত্রিক পন্থায় ইসলামি শরীয়াহ কায়েমের জন্য কাজ করে যাওয়া রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও আমেরিকার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতাকে পুঁজি করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর সাথে কোনোরকমে জোটবদ্ধ হয়ে হলেও শাসনক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন বুনতে থাকে। এমতাবস্থায়, ইসলামি শাসন কায়েমের জন্য কাফিরদের নির্ধারণ করে দেওয়া সিস্টেমের ভেতর থেকে তাদের হস্তক্ষেপমূলক পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা গ্রহণ করা বৈধ কি না সে বিষয়ক শরয়ী আলাপে যদি নাও যাই, তবুও বাস্তবতার আলোকে এটা কতটুকু কার্যকর ও ফলপ্রসূ সে বিষয়ে আমাদের সরল মনের আন্তরিক কিছু আলাপ আমরা গণতান্ত্রিক ইসলামি দলগুলোর ‘আন্তরিক’ ভাইদের উদ্দেশ্যে রাখতে চাই।
.
বাংলাদেশে প্রায় ১৫ বছর শাসনক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ তো অন্তত আভ্যন্তরীণভাবে চরম শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমেরিকার মতো পরাশক্তি যখন চায় না, তখন আওয়ামী লীগেরও ক্ষমতা থেকে উৎখাত হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে যায়। আবার দেশটির প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও এত শক্তি নিয়ে আন্দোলন করলেও ঘুরেফিরে আমেরিকার হস্তক্ষেপের আশাতেই বুক বাঁধে। এখানে শাসনক্ষমতায় আসা কিংবা টিকে থাকার জন্য গণতান্ত্রিক সিস্টেমটা যে আদৌ মুখ্য নয়, তা আরেকবার দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ সরকার তো ঠিকই এই সিস্টেমকে হ্যাক করে দুইবার (২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে) জোর করে শাসনক্ষমতায় থাকতে পেরেছিল। কেন পেরেছিল? কারণ গণতন্ত্রের দেবী আমেরিকা সেই দুইবার বাদ সাধেনি, কারণ সেসময় গেরুয়া সন্ত্রাসী ভারত নিজের স্বার্থে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারকেই সমর্থন দিয়েছিল।
.
সহজভাষায় বললে, বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটি রাষ্ট্রে বিদ্যমান কাঠামোর অধীনে থেকে শাসনক্ষমতায় যাওয়াটা যে আন্তর্জাতিক পরাশক্তি (যেমন: আমেরিকা) কিংবা আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী শক্তির (যেমন: ভারত) সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল, সেটা বাংলাদেশের ২০২৪ সালের নির্বাচনে যতটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, তা যেন এখানকার ইতিহাসে আর কোনো সময়েই অতটা হয়নি।
.
গণতন্ত্রের মানহাজ অবলম্বন করা বিভিন্ন ইসলামি দলের চিন্তাশীল আন্তরিক ভাইয়েরা খুব ভালোভাবেই এই ব্যাপারগুলো উপলব্ধি করেন। তাহলে প্রশ্ন হলো, এভাবে শাসনক্ষমতায় গিয়ে প্রকৃত ফায়দা কোথায় যখন আমাদের কাছে স্পষ্ট যে আন্তর্জাতিক কিংবা আঞ্চলিক কোনো কুফরি শক্তির অনুমোদনেই সেই শাসনক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে হয়? এভাবে শাসনক্ষমতায় গিয়েও ‘সত্যিকার ও পূর্ণাঙ্গ ইসলামি শরীয়াহ’ কীভাবে ফিরিয়ে আনা যাবে যখন এই ব্যাপারে আমাদের সামনে মিশর, আলজেরিয়া, এমনকি তুরস্কের মতো ব্যর্থতার উদাহরণ রয়েছে? সত্য হলো – একালের ফিরাউন পশ্চিমা সভ্যতার বিরুদ্ধে জি@হা@দকে এড়িয়ে যাওয়ার, নববী মানহাজকে পরিত্যাগ করে ওদেরই প্রচলন করা তন্ত্রমন্ত্রকে মেনে নেওয়ার অনিবার্য ফল হলো এটা। কুফরি শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে নববী সংঘাতকে এড়িয়ে যেতে যেতে একসময় ওদেরই অনুমোদন আর সাহায্যের দিকে তাকিয়ে থাকার পরিণতি বরণ করে নিতে হয়। আর কখনও কোনো কালে শাসনক্ষমতায় গিয়ে পৌঁছলেও ইসলামি শরীয়াহ আর কায়েম না করে পশ্চিমা শয়তানদেরকে খুশি রেখেই টিকে থাকতে হয়। নইলে যে এত বছরের রাজনীতি মুখ থুবড়ে পড়ে!
.
প্রিয় ভাইয়েরা, আল্লাহর ইবাদাত একমাত্র তাঁরই নির্দেশিত পন্থায়, তাঁর রাসূল ﷺ-এর দেখানো উপায়ে করলেই কবুল হবে। তাহলে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের ইবাদাত কেন আমরা নুসুসের সুস্পষ্ট পন্থা জি@হা@দ ফি সাবিলিল্লাহকে বাদ দিয়ে ইজতিহাদ করে মানবসৃষ্ট তন্ত্রমন্ত্রকে বেছে নিব? আফসোস গণতন্ত্রকে মানহাজ বানানো বিভিন্ন ইসলামি দলের ভাইদের জন্য। কুফরি শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে যে ধরনের সংঘাতকে তারা শুরুতেই আপাত অসম্ভব বলে ইজতিহাদ করে গণতন্ত্রের মানহাজ বেছে নেন, গণতান্ত্রিক প্রতিপক্ষগুলোর বিরুদ্ধে একসময় তারা সেই ধরনের সংঘাতেই গিয়ে লিপ্ত হন। [১] যে আত্নত্যাগ তারা দ্বীন কায়েমের নববী মানহাজ জি@হা@দ@কে বেছে নিয়ে সরাসরি আল্লাহর রাহে করতে পারতেন, সেই ধরনের আত্নত্যাগই তারা কিনা কখনও পশ্চিমা তন্ত্রমন্ত্র ফিরিয়ে আনা তো আবার কখনও সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক নির্বাচনের রাহে করেন। আর প্রায় শত বছর ধরে সেই একই চক্রে ঘুরপাক খাওয়া এখনও চলছে তো চলছেই।
.
শুধু বাংলাদেশের হিসেব করলেও, ১৯৭১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্নপ্রকাশের পর ১৯৭৯ সালের মে মাসে ইকামতে দ্বীন বা আল্লাহর দ্বীন কায়েমের লক্ষ্যে নতুন উদ্যমে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ইসলামি দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়টি – জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-এর রাজনীতি শুরু হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক চড়াই উতরাই দেখা গিয়েছে। এমনকি সেক্যুলার জাতীয়তাবাদী বিএনপির নেতৃত্বে ঐক্যজোট করে জামায়াতে ইসলামী দলটি বাংলাদেশের শাসনক্ষমতায় কিছুটা অংশও নিয়েছে। কিন্তু ১৯৭৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ বছরের গণতান্ত্রিক মানহাজে সেই যে ইকামতে দ্বীন বা দ্বীন কায়েমের মূল লক্ষ্য – তা আজোবধি এই জমিনের কোথাও এক মুহুর্তের জন্যও অর্জিত হয়নি।
.
অপরদিকে আমাদের সামনে রয়েছে আল্লাহর রাস্তা জি@হা@দ@কে সত্যিকারভাবে আঁকড়ে ধরা আ-ফ-গা-ন মুসলিমদের উদাহরণ। সেই একই বছর অর্থাৎ ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরে আ-ফ-গা-নি-স্তা-নে সোভিয়েত আগ্রাসন থেকে শুরু। সেই থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তা*লে*বা*ন এবং বৈশ্বিকভাবে জি@হা@দি মানহাজকে জীবন্ত করার লক্ষ্যে কাজ করা মু*জা-হি/দ'রা পরপর দুইটা পরাশক্তিকে হারিয়ে দিয়ে গোটা আ-ফ-গা-নি-স্তা-নের জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েম করেছেন। একবার ১৯৯৫ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত, আর পরে ২০২১ এর আগস্ট থেকে শুরু হয়ে আল্লাহর ইচ্ছায় এখনও চলছে। আর এই হলো আজকের দুনিয়ায় তন্ত্রমন্ত্রের বিপরীতে আল্লাহর রাস্তার নববী মানহাজকে আঁকড়ে ধরার ফলাফল।
.
আ-ফ-গা-নি-স্তা-নে আল্লাহর পক্ষ থেকে বাহ্যিক এই বিজয় যখন অর্জিত হয়নি কিংবা আজোবধি যদি তার দেখা না মিলতো, তখনও আমরা আল্লাহর দ্বীন কায়েমের ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট নুসুসের বিপরীতে গিয়ে পশ্চিমা তন্ত্রমন্ত্রকে কবুল করে নেওয়ার ইজতিহাদকে বৈধ বলিনি আলহামদুলিল্লাহ, এবং তা কস্মিনকালেও বলবো না ইন-শা-আল্লাহ। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় ২০২১ সালে বাহ্যিক বিজয়ের পর বিস্তীর্ণ জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা হওয়া আ-ফ-গা-নি-স্তা-ন, আর এখন অর্থনৈতিকভাবেও ঘুরে দাঁড়ানোর ফিকিরে থাকা আ-ফ-গা-নি-স্তা-ন কি এখনও তন্ত্রমন্ত্রের পিছনে ছুটে চলা মুসলিম নেতাকর্মীকে কোনো কিছু উপলব্ধি করায় না?
.
আবু উবাইদাহ আল-হিন্দি
২৩ জুমাদা আল-আখিরাহ, ১৪৪৫ হিজরি
করেছেন আবু উবাইদাহ  

ব্যাজসমূহ

18,582 টি প্রশ্ন

19,471 টি উত্তর

2,568 টি মন্তব্য

102,922 জন সদস্য

ই-নলেজ কুয়েরি বাংলা ভাষায় সমস্যা সমাধানের একটি নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট। এখানে আপনি প্রশ্ন-উত্তর করার মাধ্যমে নিজের সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি দিতে পারেন অন্যদের সমস্যার নির্ভরযোগ্য সমাধান! বিভিন্ন ব্যক্তিগত সমস্যা, পড়ালেখা, ধর্মীয় ব্যাখ্যা, বিজ্ঞান বিষয়ক, সাধারণ জ্ঞান, ইন্টারনেট, দৈনন্দিন নানান সমস্যা সহ সকল বিষয়ে প্রশ্ন-উত্তর করতে পারবেন! প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি অনলাইনে বাংলা ভাষায় উন্মুক্ত তথ্যভান্ডার গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য!
তাই আজই যুক্ত হোন ই-নলেজে আর বাড়িয়ে দিন আপনার জ্ঞানের গভীরতা...!
Empowering Novel Learners with Zeal (Enolez)


  1. Noni

    6 পয়েন্ট

    1 উত্তর

    0 মন্তব্য

    0 টি প্রশ্ন

  2. Enolej Official Team

    3 পয়েন্ট

    0 টি উত্তর

    0 মন্তব্য

    0 টি প্রশ্ন

...